ইদ মোবারক। ত্যাগ, শান্তি আর আনন্দের অনাবিল সওগাত নিয়ে বছর ঘুরে আমাদের জীবনে আবার ফিরে এসেছে পবিত্র ইদ-উল আযহা। ইদ-উল আযহা ত্যাগ ও কুরবানীর বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত। এর সাথে জড়িত রয়েছে হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) এর মহান ত্যাগের নিদর্শন। এই ত্যাগের মূলে ছিল আল্লাহর প্রতি ভালবাসা এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন।
মহান পিতা ও পুত্র আমাদের জন্য যে উদাহরণ রেখে গেছেন তার মর্মকথা হলো, আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে প্রয়োজনে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, এমনকি জীবন প্রদানেও আমাদের হতে হবে অকুণ্ঠচিত্ত। আজ ১০ জুলাই পবিত্র ঈদুল আযহা। আজ বাংলাদেশসহ আশেপাশের দেশসমূহে উৎসবের ইদ উদযাপিত হবে সর্বোচ্চ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, যথাযোগ্য মর্যাদা, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ত্যাগের মহিমায় মুসলমানগণ আনন্দ উৎসব পালন করবেন। ইদের দিন দেশের সকল মুসলমান বিনম্র হৃদয়ে ইদুল আযহার নামায আদায় করবেন এবং নামায শেষে মহান রবের উদ্দেশ্যে পশু কুরবানী দিবেন। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ইদুল আযহা হচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। প্রতি বছর হিজরি, ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ইদুল আযহা হাজির হয় পশুত্ব প্রবৃত্তির কুরবানি করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করার সুমহান পসরা নিয়ে। ত্যাগের আনন্দে উদ্ভাসিত পবিত্র ইদুল আযহা মানুষকে মানবিক চেতনায় পুষ্ট হয়ে জগতের সকল সৃষ্টির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার শিক্ষা দেয়। উৎসাহ জোগায় একটি সাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হতে। সংগত কারণে সমগ্র মুসলিমজাহান তো বটেই সমগ্র বিশ্বমানবের কাছে পবিত্র ইদুল আযহার সীমাহীন গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।
ইদুল আযহা মানে ত্যাগের ইদ। এই ইদ মহান কুরবানির শিক্ষা দেয়। কুরবানি হচ্ছে মূলত ত্যাগ। ত্যাগের মধ্যেই এর সার্থকতা ও তাৎপর্য নিহিত। পবিত্র ইদুল আযহা আমাদের এ শিক্ষাই দেয়। তবে ইদ কেবল ত্যাগের নয়, উৎসব-আনন্দেরও। এ আনন্দের ধারা আমরা লক্ষ্য করি সর্বত্র। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বাঁধভাঙা জোয়ার দেখা দেয়, যা নির্মল আনন্দেরই প্রকাশ। কুরবানিকে আরবি ভাষায় ‘উযহিয়্যা’ বলা হয়। উয্যাহিয়্যা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ওই পশু, যা কুরবানির দিন জবেহ করা হয়। ইসলামি শরীয়াতের পরিভাষায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট সময়ে পশু জবেহ করাকে কুরবানি বলা হয়। এটি একটি আর্থিক ইবাদাত। যার কারণে সবার উপরই কুরবানি করার বাধ্যবাধকতা নেই। তাই যাদের ওপর কুরবানি আদায় করা আবশ্যক তাদের উচিত নির্দিষ্ট নিয়মে ও নির্দিষ্ট সময়ে পশু কুরবানি দেয়া। তবে কুরবানির মূল উদ্দেশ্য যেহেতু নিজেদের পশুত্বপ্রবৃত্তির কুরবানি করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করা সেহেতু এই উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের গৌরব-মর্যাদার প্রতীক হিসেবে কুরবানিকে বিবেচনা করা উচিত নয়। বর্তমান সময়ে অনেকেই কুরবানির মাধ্যমে নিজের আর্থিক সামর্থ্য জাহির করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। প্রকৃতপক্ষে এই প্রতিযোগিতাপ্রবণ কুরবানির কোনো মূল্য নেই আল্লাহর কাছে। মহান আল্লাহ কেবল ওই কুরবানিকেই কবুল করে থাকেন, যেটা কেবলই তাঁরই প্রেম-ভালবাসায় হয়ে থাকে।
কুরবানী শেষে পশুর রক্ত, বর্জসহ নানারকম ময়লা আবর্জনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা আমাদের সকলের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। পশুর বর্জ-রক্ত সমূহ মাটির নীচে পুতে রাখলে সবচেয়ে ভালো হয়। কোরবানীর মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্যের দিকে খেয়াল রাখা অর্থাৎ প্রতিবেশী যারা কোরবানী দেয়নি তাদের দিকে খেয়াল রাখা ও গরীর, ফকির মিছকিনদের অংশ যথাযথভাবে বন্টন করা। শেষ কথা ইদুল আযহা মানে ত্যাগের ইদ। এই ইদ মহান কুরবানির শিক্ষা দেয়। কুরবানি হচ্ছে মূলত ত্যাগ। ত্যাগের মধ্যেই এর সার্থকতা ও তাৎপর্য নিহিত। তাই পূর্বকন্ঠ পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হউক সকলের জীবন। ইদ সবার জীবনে নিয়ে আসুক অনাবিল সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি। ইদ মোবারক।